ভূমিকা
মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই মানচিত্রটি শুধু আগের মানচিত্রগুলোর তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বিস্তারিত নয়, বরং এটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে এই আবিষ্কারটি এক ধরনের “দ্বৈত তরোয়াল” হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ, একদিকে এটি মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে আরও বেশি শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক প্রশ্নের উত্তর এখনও দেয়নি।
এই মানচিত্রে আমরা যে বিকিরণ দেখি, তা এসেছে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB) থেকে—যেটা হচ্ছে বিগ ব্যাং-এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোর শেষ অবশিষ্টাংশ। নতুন তথ্য এবং প্রযুক্তির সাহায্যে এই প্রাথমিক মানচিত্র এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও পরিষ্কারভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে, যা মহাবিশ্বের গঠন, আকার, বয়স এবং সম্প্রসারণের হার নিয়ে আমাদের বোঝাপড়াকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
CMB (কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড) কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
CMB বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে মহাবিশ্বের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি এমন এক ধরনের বিকিরণ যা বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে সৃষ্টি হয়েছিল, যখন মহাবিশ্ব প্রথমবারের মতো এতটাই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল যে আলো অবাধে ছড়াতে পেরেছিল। এই আলোই হচ্ছে আমাদের দেখা সবচেয়ে প্রাচীন আলো, যা মহাবিশ্বের “শৈশবকাল” থেকে এসেছে।
সেই সময়কার এই আলো আজ আর চোখে দেখা যায় না, কারণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর ধরে মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার ফলে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়ে এখন তা দৃশ্যমান আলোর পরিবর্তে মাইক্রোওয়েভে পরিণত হয়েছে। ফলে আমরা এখন সেটিকে দেখতে পাই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ হিসেবে—এটাই CMB।
এই CMB-কে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের শুরুর সময়ের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি যেন একটি টাইম মেশিনের মতো, যা আমাদের নিয়ে যায় সেই সময়ে, যখন প্রথমবার আলোর অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল।
মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র তৈরির ক্ষেত্রে CMB একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, কারণ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মহাবিশ্বের গঠন, উপাদান, ও বিকাশের অনেক রহস্য। নতুন মানচিত্রে এই CMB-এর আরও পরিষ্কার ও বিস্তারিত চিত্র পাওয়া গেছে, যা মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণাকে আরও গভীর করেছে।
ACT টেলিস্কোপ ও এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান
ACT বা আটাকামা কসমোলজি টেলিস্কোপ হচ্ছে একটি বিশেষ গবেষণা টেলিস্কোপ, যা চিলির আটাকামা মরুভূমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রাথমিক আলো, অর্থাৎ CMB (কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড), আরও পরিষ্কারভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন।
ACT-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো—এটি আমাদের এমন একটি মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র দিয়েছে, যা আগের যেকোনো মানচিত্রের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বিশদ এবং স্পষ্ট। যদিও এটি শুধুমাত্র আকাশের অর্ধেক অংশ কভার করতে পেরেছে (কারণ এটি একটি গ্রাউন্ড-ভিত্তিক টেলিস্কোপ), তবুও এই ডেটা বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে আরও নিখুঁত তথ্য পাওয়া গেছে।
ACT টেলিস্কোপ শুধু CMB-এর আলো সংগ্রহ করেনি, বরং সেটির মেরুকরণ (polarization)—অর্থাৎ আলো কোন দিকে দুলছে বা স্পিন করছে—তাও পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে। এই মেরুকরণ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে সময়ের সাথে সাথে সেই প্রাচীন আলো কীভাবে বিকশিত হয়েছে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জো ডানক্লে বলেছেন, ACT থেকে পাওয়া তথ্য মহাবিশ্বের আকার, উপাদান, বয়স এবং সম্প্রসারণের হার আরও নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে সাহায্য করেছে। এই মানচিত্র শুধু আমাদের চোখের সামনে নতুন তথ্যই তুলে ধরেনি, বরং মহাবিশ্বের শুরুর সময় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ করেছে।
ACT মানচিত্র বনাম পূর্ববর্তী গবেষণা
মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র তৈরির ক্ষেত্রে ACT (Atacama Cosmology Telescope) যেমন একটি বড় অগ্রগতি, তেমনি এর আগে আরও কিছু বিখ্যাত গবেষণা প্রকল্প এই কাজ করেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল COBE, WMAP এবং Planck মহাকাশযান।
এই মহাকাশ-ভিত্তিক গবেষণা মিশনগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা CMB বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের বিশদ মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির Planck মহাকাশযান প্রথমবারের মতো সিএমবির একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত ছবি তৈরি করেছিল।
তবে ACT-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে—এটি একটি গ্রাউন্ড টেলিস্কোপ। ফলে এটি কেবলমাত্র আকাশের অর্ধেক অংশ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে। তবুও, ACT পূর্ববর্তী মহাকাশ-ভিত্তিক মিশনের তুলনায় অনেক বেশি উচ্চ রেজোলিউশন এবং সংবেদনশীলতা (sensitivity) প্রদান করেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, ACT কেবলমাত্র ছবিই নয়, CMB-এর মেরুকরণ (polarization)—অর্থাৎ আলো কোন দিকে কম্পন করে তা—পরিমাপ করেছে। এই মেরুকরণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও গভীরভাবে বুঝতে পারছেন, কীভাবে মহাবিশ্বের প্রাথমিক বিকিরণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
এই কারণে বলা যায়, যদিও ACT আকাশের একটি নির্দিষ্ট অংশের ছবি তুলেছে, তথাপি তা পূর্ববর্তী মানচিত্রগুলোর চেয়েও বেশি নির্ভুল, উন্নত এবং তথ্যবহুল।
ল্যাম্বদা-CDM মডেল ও ACT ডেটার মিল
ACT টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত নতুন ডেটা আমাদের “মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র” সম্পর্কে অনেক পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। এই মানচিত্র শুধু নতুন কিছু তথ্য দেয়নি, বরং এটি আমাদের আগে থেকে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড মহাজাগতিক মডেল, যেটিকে ল্যাম্বদা-CDM (Lambda-CDM) বলা হয়, সেটিকেও আরও জোরালোভাবে সমর্থন করেছে।
ল্যাম্বদা-CDM মডেল হল একটি গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, যা বলে যে মহাবিশ্বে অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার (CDM – Cold Dark Matter) এবং একটি ধ্রুবক ডার্ক এনার্জি (Lambda) আছে, যা মহাবিশ্বকে প্রসারিত করে চলছে।
ACT থেকে প্রাপ্ত ডেটা এই মডেলের সাথে মিল রেখে নিশ্চিত করেছে যে:
- মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর,
- এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে প্রতি মেগাপারসেক দূরত্বে ৬৭ থেকে ৬৮ কিলোমিটার হারে প্রসারিত হচ্ছে।
এই প্রসারণের হারকেই বলা হয় হাবল কনস্ট্যান্ট, এবং পূর্ববর্তী Planck মিশনের ফলাফলের সঙ্গে এর চমৎকার মিল পাওয়া গেছে। নতুন ACT ডেটা কেবল এই পরিমাপকে আরও সুনির্দিষ্ট করেছে, যার ফলে আমাদের মহাবিশ্ব নিয়ে পূর্ববর্তী ধারণাগুলো আরও নির্ভরযোগ্য রূপ পেয়েছে।
এই মিল বিজ্ঞানীদের জন্য একটি স্বস্তির বার্তা, কারণ এটি বোঝায় যে আমাদের বর্তমান তত্ত্ব ও ধারণা এখনো পর্যন্ত ঠিক পথে রয়েছে।
বিরোধ ও সীমাবদ্ধতা: সকল বিজ্ঞানী খুশি নন কেন?
ACT টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র যেমন অনেক তথ্য নিশ্চিত করেছে, তেমনি এটি কিছু বিজ্ঞানীর মনে হতাশাও তৈরি করেছে। কারণ, অনেকে আশা করেছিলেন এই নতুন ডেটা এমন কিছু নতুন প্রমাণ এনে দেবে, যা বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাইরে কোনো অজানা শক্তি বা কণার অস্তিত্ব তুলে ধরবে।
কলিন হিল, যিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, তিনি বলছেন যে এই মানচিত্রে “চকচকে উত্তেজনা” (cosmic tension) নামে পরিচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, ACT এবং Planck মিশন থেকে পাওয়া হাবল কনস্ট্যান্টের মান এবং সরাসরি পরিমাপের মধ্যে এখনও পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য দূর করতে হলে হয়তো নতুন ধরনের কণা বা শক্তির অস্তিত্বের প্রমাণ দরকার হতো—যা ACT ডেটা সরবরাহ করতে পারেনি।
হিলের ভাষায়, “আমরা সবাই এই ACT ডেটার মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাথে এর সামঞ্জস্য দেখে বিস্মিত হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই নতুন পরিমাপ যেন আমাদের আরও বেশি ‘স্ট্রেইটজ্যাকেট’ (বাঁধা ধরা কাঠামো)-এ আটকে ফেলছে। কারণ, এটি রহস্যকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে।”
অর্থাৎ, যেখান থেকে বিজ্ঞানীরা নতুন পথের দিশা পেতে চেয়েছিলেন, সেখানে তারা পেলেন শুধু পুরনো মডেলের শক্তিশালী পুনঃনিশ্চয়ন। তাই, এই নতুন মানচিত্র যেমন এক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য, তেমনি অন্যদিকে এটি নতুন রহস্যের দ্বারও খুলে দিয়েছে।
ACT প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ও নতুন পরিকল্পনা
ACT টেলিস্কোপ ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা দিয়েই তৈরি হয়েছে এই অত্যাধুনিক মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র। কিন্তু এখন এই প্রকল্পের ডেটা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, আগামী কিছু বছরের মধ্যে এই মানচিত্রের চেয়ে উন্নত বা আরও নির্ভুল মানচিত্র পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে বিজ্ঞানীরা থেমে নেই। চিলিতে আরও একটি নতুন টেলিস্কোপ স্থাপনের কাজ চলছে, যা এই বছরের শেষের দিকে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ACT-এর কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
যেহেতু ACT টেলিস্কোপ কেবল আকাশের অর্ধেক অংশ কভার করতে পেরেছিল, তাই মহাবিশ্বের পূর্ণ চিত্র পেতে হলে আকাশের বাকি অংশ থেকেও ডেটা সংগ্রহ করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা নতুন টেলিস্কোপ বসানোর পরিকল্পনা করছেন গ্রিনল্যান্ড এবং তিব্বতে।
তবে এর মধ্যেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- গ্রিনল্যান্ডে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।
- এবং তিব্বত একটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকা হওয়ায় সেখানেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এই কারণেই বিজ্ঞানীরা বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন এবং যেখানে সম্ভব, সেখানেই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডেটা উন্মুক্ত হওয়ার প্রভাব ও বৈজ্ঞানিক সমাজে প্রতিক্রিয়া
ACT টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত তথ্য এখন জনসাধারণ এবং বৈজ্ঞানিক সমাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, শুধু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরাই নয়, বরং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের বিজ্ঞানীরা এই ডেটা ব্যবহার করে গবেষণা চালাতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেস ক্লোবা বলেন, “এখন পুরো মহাজাগতিক গবেষণা সম্প্রদায় এই ডেটা হাতে পাবে এবং নিজেদের গবেষণা দল নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করতে পারবে।” তিনি এটিকে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময় হিসেবে দেখছেন, কারণ এই উন্মুক্ততা থেকে আরও অনেক নতুন তথ্য এবং অনুসন্ধান বেরিয়ে আসবে।
ডেটা উন্মুক্ত হওয়ার ফলে:
- গবেষণার সুযোগ আরও ব্যাপক হয়েছে,
- নতুন গবেষক ও ছাত্রদের অংশগ্রহণ বাড়বে,
- এবং ভবিষ্যতে আরও সৃষ্টিশীল ব্যাখ্যা ও মডেল তৈরি হতে পারবে।
এটা এক দিক থেকে বিজ্ঞানচর্চাকে গণমুখী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা আগামী দিনের মহাবিশ্ববিষয়ক গবেষণাকে আরও গতিশীল করে তুলবে।
উপসংহার
মহাবিশ্বের প্রাথমিক মানচিত্র আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে বোঝার পথে এক বিশাল অগ্রগতি। ACT টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া নতুন মানচিত্র আগের সব গবেষণার তুলনায় বেশি বিস্তারিত, উন্নত এবং নির্ভুল। এই মানচিত্র মহাবিশ্বের বয়স, গঠন এবং সম্প্রসারণের হার সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।
একদিকে এই মানচিত্র স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজিকাল মডেলকে সমর্থন করেছে, অন্যদিকে এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ রহস্যের সমাধান দিতে পারেনি—যেমন হাবল কনস্ট্যান্টের বিভ্রান্তি বা নতুন কণা ও শক্তির সম্ভাব্য অস্তিত্ব। ফলে বিজ্ঞানীদের সামনে যেমন কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, তেমনি নতুন কিছু প্রশ্নও উঠে এসেছে।
এই কারণে এই মানচিত্রকে অনেকেই বলছেন “দ্বৈত তরোয়াল“—একদিকে এটি আমাদের জ্ঞানে আলো এনেছে, আবার অন্যদিকে নতুন অন্ধকার দিকের ইঙ্গিতও দিয়েছে।
ACT প্রকল্প শেষ হলেও ডেটা এখন উন্মুক্ত, এবং বিশ্বের বিভিন্ন গবেষক এখন সেটির উপর কাজ করছেন। ভবিষ্যতে নতুন টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাবিশ্বের অজানা অংশগুলো সম্পর্কে আরও জানার আশাও রয়ে গেছে।
অর্থাৎ, এই মানচিত্র কেবল একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়—এটি আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের পথে এক নতুন অধ্যায়।